সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারী খালে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ। ৩শ পরিবারের আড়াই হাজার একর জমির চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পরেছে স্থায়ী জলাবদ্ধতায়। সরকারের উন্নয়ন স্বার্থে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভুমি অধিগ্রহনে ধানখালীর চাষাবাদ যোগ্য জমি কমেগেছে।
যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল কিন্তু প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট ও অনৈতিক বানিজ্যিক লালসায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে কৃষকের বারোটা বাজিয়ে চলছে ওই মহলটি। ধানখালীর পাঁচজুনিয়া গ্রামে দীর্ঘ চার কিলোমিটার সরকারি খাল। খালের মধ্যে বাঁধ দিয়েছে ১১জন স্থানীয় প্রভাবশালী।
তৈরি করা হয়েছে ১৬টি মাছের ঘের। বাড়ি কিংবা রেকর্ডীয় জমির মুখশা দাবি করে দখল করে নিয়েছে যে যার মতো করে। নেয়া হয়নি কোন অনুমোদন কিংবা লিজ। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র নেতারা একাট্টা হয়ে দখল বানিজ্যে নেমেছে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রায় আড়াই হাজার একর কৃষি জমির পানি নিস্কাশনের জন্য বিকল্প হিসেবে সরকারি রাস্তার ওপর ছিলো একটি মাত্র কালভার্ট। কালভার্টটি ভেঙ্গে যাওয়ায় আড়াই হাজার একর জমির বর্ষার পানি নামতে পারছে না। সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া গ্রামের এ দৃশ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নমোর হাট লাগোয়া পাঁচজুনিয়া কোলার প্রায় আড়াই হাজার একর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও হাটু সমান। দুর্ভোগী অসহায় কৃষকরা বলেছেন, আমন ধানের মওসুমের অর্ধেকটা সময় পার হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু এখও তারা বীজ তলাই করতে পারেনি। এলাকার শহীদ হাওলাদার, খলীল মুন্সী, স্বপন হাওলাদার, জাহিদ মৃধা, জহিরুল মুন্সী, হাসান হাওলাদার একটি করে এবং আলমগীর হাওলাদার, ওহাব মৃধা, আফজাল মোল্লা, আনছার উদ্দিন মোল্লা ও রিয়াজ মোল্লা দু’টি করে ঘের তৈরি করেছে।
ওই গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম মৃধা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিন ফসলী জমিতে চাষাবাদ করতে না পারার কারনে অসহায় কৃষক সমাজ চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পরেছে। ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদারকে বার বার অবহিত করা হলেও তিনি কৃষকের স্বার্থে বাঁধ গুলো না কেটে ওই সকল দখলবাজদের স্বার্থ রক্ষায় ছিলেন বেপরোয়া। পাঁচজুনিয়া কোলার প্রায় আড়াই হাজার একর জমি তিন ফসলী। তিনি ওই কোলায় প্রায় দেড় একর জমির মালিক। জলাবদ্ধতার কারনে সে গত বর্ষা মওসুমে মাত্র নয় মন ধান পেয়েছে।
কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, তার সাড়ে ৫ একর জমিতে মাত্র ৩৫ মন ধান পেয়েছে। কৃষক শাহাবুদ্দিন হাওলাদার বলেন, তার চার একর জমির ধান গত বর্ষার সময় জলাবদ্ধতার কারনে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই এলাকার কৃষক-বর্গাচাষী সামসুল হক মুন্সী, মুকুল মোল্লা, ফিরোজ মোল্লা, আলাউদ্দিন মল্লিক বলেন, বাঁধ গুলো কেটে দিলে কৃষক চাষীর সমস্যা নিরসন হতো। গত বছরের মতো এ বছর যেন জলাবদ্ধতা না থাকে।
তরমুজ চাষের উপযোগী জমিতে তরমুজ চাষ করতে পারেনা প্রান্তিক কৃষকরা। এ ব্যাপারে রিয়াজ মোল্লা বলেন, ২৫ বছর আগে থেকেই এই ঘের করা হয়েছে। পাঁচজুনিয়া কোলায় কোন দিন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। সাবেক ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মৃধা বলেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে কৃষক চাষীদের স্বার্থ বিবেচনা করে অবিলম্বে সকল বাঁধ কেটে দেওয়া দরকার। ধানখালী ভুমি অফিস তহশীলদার হামিদুল হক বাচ্চু বিশ্বাস বলেন, কৃষকের স্বার্থে চলমান স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে উপর মহলের নির্দেশনা পেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্বা এস.এম রাকিবুল আহসান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিনে তদন্ত করে বাঁধ গুলো কেটে দেয়া হবে। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যানকে বলে দিচ্ছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়।
Leave a Reply